প্রকাশিত: Sat, Jul 29, 2023 10:51 PM
আপডেট: Mon, Jun 30, 2025 8:51 PM

[১]সংঘাত সমাধান আনবে না: এডিটরস গিল্ডের গোলটেবিলে অভিমত

রিয়াদ হাসান: [২] আলোচকরা বলেন, একদল চায় নির্বাচন বর্জন করে কিছু অর্জন করতে এবং আরেক দল যেকোনোভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করছে। নির্বাচন বর্জনের মাধ্যমে কেউ যেন কিছু অর্জনের সুবিধা না পায় এবং নির্বাচনে আসে, সেই চাপ তৈরি করা যেমন দরকার, তেমনই যারা ক্ষমতাধীন তারা যেন নির্বাচন শতভাগ সঠিকভাবে পরিচালনা করতে বাধ্য হয় সেজন্য গণমাধ্যম, সাধারণ নাগরিকের পক্ষ থেকে চাপ তৈরি করা দরকার। মনে রাখতে হবে, সংঘাত সমাধান আনবে না, বরং বিদেশিদের নাক গলানোর  সুযোগ করে দেবে। জনগণ এবার কোনও দলকে তাদের ভাগ্য নিয়ে খেলতে দেবে না।  সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

[৩] শনিবার সম্পাদকদের শীর্ষ সংগঠন এডিটরস গিল্ডের নিয়মিত এ গোলটেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সভাপতি এবং একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু। আলোচনার বিষয় ছিল, ‘নির্বাচনের পথে বাংলাদেশ: রাজনীতি-ভূরাজনীতি-অর্থনীতি’।

[৪] আলোচনায় রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, নির্বাচনের আগে আর মাত্র ৫ মাসের মতো আছে। নির্বাচন কমিশন নিয়ে আগে কখনোই প্রশ্ন উঠতো না। যখন নির্বাচন কমিশন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়, তখন বিষয়টি হাস্যকর হয়।

[৫] তিনি বলেন, বাইরের শক্তি বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সহযোগী শক্তি বাংলাদেশের ওপর প্রভাব ফেলতে চেষ্টা করছে। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পরে এক ধরনের পোলারাইজেশন আছে। রাশিয়া ও চীন একদিকে আছে, ভারত মাঝামাঝি জায়গায় আছে। এরমধ্যে বাংলাদেশকে যদি সঙ্গে নিতে পারে আমেরিকা, তাহলে ভারতের পাশাপাশি নতুন একটু সমীকরণ তৈরি হয়। সেই জায়গায় পধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছেন, সেটির প্রশংসা করেন তিনি।

[৬] সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন মনে করেন, এবারের নির্বাচন আগের যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে ক্রিটিক্যাল নির্বাচন হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রায় প্রতিদিন নানা কর্মকাণ্ডে বুঝা যাচ্ছে যে, পশ্চিমা দেশ ও তাদের সমর্থকরা বাংলাদেশ ও তার আগামী নির্বাচন নিয়ে ভাবছে। এটা নির্বাচনি ইতিহাসে দেখা যায়নি। তারা হয়তো পর্যবেক্ষক পাঠায়। কিন্তু একটি দেশের নির্বাচনের সাত মাস আগে থেকে যে ধরনের আন্তর্জাতিক আবহ তৈরি হচ্ছে, সেটা কখনো চিন্তাও করিনি।

[৭] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ বলেন, আমরা কেউই সংঘর্ষ ও রক্তপাত  চাই না। একজন মনে করছে, যদি নির্বাচনে না যাই আমি মারা যাবো, আরেকজন মনে করছে, আমি যদি না জিতি তাহলে আমার ভবিষ্যৎ শেষ। এ রকম জায়গায় কোনো সমঝোতা সম্ভব না। একমাত্র সমঝোতা সম্ভব তখনই যখন দুজনে মনে করবে যে, আমিও কিছু লাভবান হবো, সেও কিছু লাভবান হবে। সেই ফর্মুলা নেই আমি তা মনে করি না। এমনকি ভেতরে ভেতরে সে রকম ফর্মুলা নিয়ে কাজও হচ্ছে বলে আমি মনে করছি।

[৮] বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, তাই বলে পুলিশ নৈরাজ্য তৈরি করতে দেবে না। আমাকে সম্প্রতি রাস্তায় আক্রমণ করলো, বিএনপির মিছিল থেকে আমার গাড়ি ঘিরে আক্রমণ চালালো। গণজীবনে যা করছে সেটাতো সহ্য করার কথা না। এই অগ্নিসন্ত্রাস বিএনপির ইতিহাস। সেটাতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হতে দেবে না। আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ লঙ্ঘন করে বিদেশিরা যেভাবে নাক গলাচ্ছে, তা কেউ সহ্য করতে পারে না।

[৯] আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এখন থেকে নিজেরা বুঝার চেষ্টা করবে তাদের সঙ্গে জনগণ কতটা আছে। সমাধান সবসময় জনগণ করে। কয়েকমাসের মধ্যে বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা নির্বাচনে যাবে কী যাবে না। ভুলে গেলে চলবে না, সমাধান জনগণের মধ্যেই আছে, বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না।

[১০] পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ২০১২/১৩ সালের দিকে আমাদের জাতীয় ব্যয়ের ১২ শতাংশ ঋণ করা হতো। এখন সেই ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৭/৩৮ শতাংশ। ব্যাংকের অবস্থা খারাপ। সরকার ব্যাংক থেকে টাকা ধার নেবে, সেই টাকা ব্যাংকে নেই। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন পর্যন্ত সময় হয়তো পার হতে পারবে, কিন্তু এরপরে খুব খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।

[১১] গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনায় আরো ছিলেন সাবেক আইজিপি ড. হাসান মাহমুদ খন্দকার এবং আর্টিকেল ১৯-এর পরিচালক ফারুক ফয়সাল। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব